Header Ads

Header ADS

ল্যাপটপ কেনার আগে যে ১২ টি বিষয় লক্ষ্য রাখা জরুরি



কিছুদিন আগেও ল্যাপটপ ছিলো বিলাসিতার পণ্য কিন্তু বর্তমান সময়ে ল্যাপটপ দৈন্দদিন ব্যবহার্য জিনিসে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন মানের ও কনফিগারেশনের ল্যাপটপ রয়েছে। রয়েছে দামের ও অনেক পার্থক্য। ল্যাপটপের সবচেয়ে বেশি সুবিধা হল এটি চাইলে খুব সইজেই বহন করা যায় এছাড়া নানা ধরনের আধুনিক ফিচার, উন্নত প্রযুক্তি এবংমাল্টিফাংসনাল ইত্যাদি কারণে ল্যাপটপ এখন অনেক জনপ্রিয়।


ল্যাপটপের মানের সাথে এর দামের বেশ তারতম্য রয়েছে। এখন সাধ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় ল্যাপটপ বেছে নেওয়াটা বেশ কঠিন বিষয় । ল্যাপটপ কেনার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখলে আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হতে পারে।

ল্যাপটপ কেনার আগে আপনাকে ২ টি বিষয় সবার আগে ভাবতে হবেঃ-

১ম নংঃ বাজেট।
চাইলে আপনি ওয়াল্ডের সেরা ল্যাপটপটি হয়ত এসময় কিনতে পারবেন না, তাই আপনার সখ, প্রয়োজনীয়তা এবং বাজেটের সাথে একটা মিলবন্ধন ঘটাতে হবে।

২য় নংঃ আপনার প্রয়োজনীয়তা
ধরা যাক, আপনি ইন্টারনেট ব্যাবহার কিংবা, মুভি দেখার জন্য কিংবা আপনার অফিশিয়াল ডকুমেন্টেশন এর কাজ করার জন্য একটি ল্যাপটপ কিনবেন । এক্ষেত্রে বাজেট কোন ব্যাপার না। তাহলে বাজারের যে কোন ব্রান্ডের একটি ল্যাপটপ কিনতে পারেন।

কিন্তু আপনি যদি গ্রাফিক্স এর কাজ করেন কিংবা হাই কোয়ালিটি গেমস খেলতে চান, কিংবা আধুনিক সব ফিচার সম্বলিত ল্যাপটপ যেমনঃ টাচ স্ক্রিন, পৃথক স্ক্রিন ইত্যাদি চান অবশ্যই উচ্চমানের ল্যাপটপ কিনতে হবে।

বাজেট এবং আপনার প্রয়োজনীয়তার বিষয়গুলো একসাথে নিয়ে একটি ল্যাপটপ কেনার আগে আপনাকে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে তা নিয়ে একটা গাইড লাইন দেয়ার চেষ্টা করাবো।

ল্যাপটপ কেনার সময় যে যে বিষয় গুলো খেয়াল রাখা দরকার সেগুলো নিম্নে দেয়া হলোঃ 


১. ব্র্যান্ডঃ বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের ল্যাপটপ রয়েছে। যেমন আসুস, ডেল, এইচপি, লেনোভো, এসার ইত্যাদি। আপনি যদি ভালো ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ কিনতে চান তাহলে নিতে পারেন লেনেভো,আসুস অথবা এইচপি। ল্যাপটপ জগতে এই ব্র্যান্ড গুলো অত্যন্ত ভালো।

পরিচিত ব্র্যান্ডের ওপর আস্থা রাখতে পারেন। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ল্যাপটপ কেনার আগে তাদের বিক্রয় পরবর্তী সেবা ও অতীতে তাদের ল্যাপটপ বিক্রির রেকর্ড সম্পর্কে জানা থাকলে ভালো হবে। কেনার সময় অবশ্যই ওয়ারেন্টি কার্ড, চার্জার, ব্যাগ ইত্যাদি আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র যা আপনার ল্যাপটপের সঙ্গেই পাচ্ছেন তা বুঝে নেবেন। এ ছাড়া সব সময় অনুমোদিত ডিলার, আমদানিকারক, বিশ্বস্ত মাধ্যম বা দোকান থেকে ল্যাপটপ কিনুন।

২। আকারঃ  আপনি যদি বেশি বেশি ভ্রমণ করেন তখন আপনার জন্য হালকা-পাতলা ল্যাপটপ বা আলট্রাবুক ভালো হবে। নোটবুক কেনার সময় নোটবুকের ওজন দেখে নেওটা কিন্তু জরুরী। 

যদি বাড়ি বা অফিসের কাজের জন্য ল্যাপটপ কিনতে চান তবে ১৪ ইঞ্চি বা ১৫.৬ ইঞ্চি মাপের ডিসপ্লেযুক্ত ল্যাপটপ কিনুন। আপনার যদি বেশি ভ্রমন করার দরকার না থাকে এবং গেম খেলতে বেশি পছন্দ করেন তাইলে ১৫.৬ বা ১৭ ইঞ্চি মাপের ডিসপ্লেযুক্ত ল্যাপটপ কিনতে পারেন।

আপনি যদি সব সময় সঙ্গে করে ল্যাপটপ নিয়ে ঘোরেন তাহলে আপনার জন্য ষ্টীল বডির ল্যাপটপ কেনা উচিত হবে কারন এগুনো প্লাস্টিক বডির চেয়ে তুলনামুলক মজবুত। আপনার ল্যাপটপ যদি বাড়ির সকলের ব্যবহারের জন্য হয় তবে তা ও ষ্টীল বডির হলে ভালো হবে।


৩. ডিসপ্লে কোয়ালিটিঃ আমাদের ল্যাপটপে যে কাজই করি না কেন আমাদেরকে সবসময় কিন্তু ল্যাপটপের স্ক্রিন/ডিসপ্লের দিকে চোখ রাখতে হবে। তাই ডিসপ্লে অবশ্যই চোখের জন্য আরামদায়ক হতে হবে। ডিসপ্লে অবশ্যই এলইডি হলে ভালো।

ল্যাপটপের রেজুলেশন কত তা দেখে ল্যাপটপ কেনা উচিত। ১৯২০x১০৮০ পিক্সেল এর স্ক্রিন নিতে পারেন। বাজেট কম থাকলে ৭২০ পিক্সেল এর স্ক্রিন নিতে পারেন।

৪. টাচস্ক্রিনঃ আপনি যদি টাচ করে ল্যাপটপ চালাতে পছন্দ করেন, তবে টাচস্ক্রিন ল্যাপটপ আপনার জন্য ভালো হবে। টাচস্ক্রিন ল্যাপটপ আপনি কিবোর্ডযুক্ত করে ল্যাপটপ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে টাচস্ক্রিন সুবিধার ল্যাপটপ পাবেন। সাধারণত সিনেমা দেখা, গান শোনা, ইন্টারনেট ব্যবহার করাসহ ছোটখাটো কাজের জন্য কম দামের ল্যাপটপ কেনাই যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রে ১৫ ইঞ্চি পর্দার মনিটরসহ ল্যাপটপ কিনতে পারেন।


৫. গ্রাফিক্সঃ আপনি কি উচ্চমানের ভিডিও দেখেন কিংবা হাই কোয়ালিটি গেমস খেলেন অথবা গ্রাফিক্স এর কাজ করেন? যদি এর উত্তর হ্যা হয় তাহলে অবশ্যই ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স সম্বলিত ল্যপটপ নিবেন।

জিটিএক্স সিরিজের মধ্যে জিটিএক্স ১০৫০ থেকে শুরু করে জিটিএক্স ১৬৬০ পর্যন্ত রয়েছে এবং আরটিএক্স সিরিজের মধ্যে আরটিএক্স ২০৫০ থেকে শুরু করে আরটিএক্স ২০৮০ পর্যন্ত রয়েছে। জিটিএক্সের তুলনায় আরটিএক্স সিরিজের ল্যাপটপগুলোর দাম অনেকটাই বেশি।

আর আপনি যদি সচরাচর ভিডিও এডিটিং না করেন, থ্রিডি গ্রাফিক্সের কাজ না করেন, ও ভারী গেম না খেলেন তাহলে আলাদা গ্রাফিক্স কার্ড যুক্ত ল্যাপটপ আপনার না হলেও চলবে। কারন ল্যাপটপে সাধারণত একটি বিল্ট-ইন গ্রাফিক্স কার্ড সংযুক্ত থাকে।


৬. সিপিইউ বা প্রসেসর ঃ আপনার ল্যাপটপের পারফরম্যান্স নির্ভর করবে সিপিইউ বা প্রসেসর এর উপর। তাই অবশ্যই ভালো মানের প্রসেসর কিনা উচিত। বর্তমানে বাজারে দুই ধরণের প্রসেসর পাওয়া যায়।

বাজারে এখন ইন্টেলের কোর আই ৭ এর ৯ম জেনারেশনের ল্যাপটপ পাওয়া যায়। আপনার বাজেট যদি বেশী হয় তাহলে কোর আই ৭ বা কোর আই ৫ নিতে পারেন। এধরনের ল্যাপটপ গুলো দিয়ে আপনি সকল প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারবেন। 

বাজেট একটু কম হলে কোর আই ৩ প্রসেসরের ল্যাপটপও নিতে পারেন। 

 সম্প্রতি বাজারে কোর আই ৯ সম্বলিত ল্যাপটপ পাওয়া যাচ্ছে। কোর আই ৯ সিরিজের প্রসেসরগুলো এ পর্যন্ত কালের সবথেকে দামী প্রসেসর সিরিজ হতে যাচ্ছে। ট্যাক্স ব্যাতিত ১০ কোরের কোর আই ৯ এর দাম হবে প্রায় হাজার ডলার। আর ১৮ কোরের প্রসেসরটির দাম রাখা হয়েছে প্রায় দুই হাজার ডলার মানে বাংলাদেশি টাকায় ২ লাখ টাকার আশেপাশে।

৭। র‌্যামঃ আপনার ল্যাপটপের মেমরি বা র‍্যাম যত বেশি আপনি ততই দ্রুত ,স্বাচ্ছন্দ্যে এবং মসৃণ ভাবে মাল্টিটাস্কিং কাজ করতে পারবেন। 

আপনাকে অবশ্যই ৪ জিবি অথবা তার থেকে বেশি র‌্যামের ল্যাপটপ কিনতে হবে যদি বাজেট ভালো হয় ৮ জিবি র‍্যাম নিতে পারেন। 

ভবিষ্যতে চাইলে র‍্যাম যেন বাড়াতে পারি এজন্য র‍্যাম স্লট ২ টা হলে ভালো।

৮। হার্ডড্রাইভঃ দিন দিন আমাদের ডাটা সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীতা বেড়েই চলেছে তাই ল্যাপটপের হার্ডড্রাইভ বেশি দেখে কেনা উচিত যাতে করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণের জন্য এক্সটারনাল হার্ড ডিস্ক না দরকার হয়।

বর্তমান বাজারে HDD হার্ডডিস্ক বেশী পাওয়া যায়, আপনি যদি বাজেট একটু বৃদ্ধি করতে পারেন, তাহলে HDD বদলে SSD স্টোরেজ নিতে পারেন। HDD এর তুলনায় SSD দ্রুত ডাটা ট্রান্সমিট করতে পারে। ২৫০জিবি SSD স্টোরেজের দাম প্রায় ৩ হাজার টাকা, যেখানে ১০০০জিবি হার্ডডিস্ক/HDD মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার মত।

৯। ব্যাটারিঃ বেশী সময় ধরে ল্যাপটপ এর ব্যাটারি ব্যাকাপ থাকবে এটা আমরা সকলেই আশা করি। । ল্যাপটপের অফিসিয়াল ডকুমেন্ট দেখে এর ব্যাটারি ব্যাকআপ টাইম সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেবেন।

মোবাইল এর ব্যাটারির মত ল্যাপটপ এর ব্যাটারিতেও mAh(মিলি অ্যাম্পিয়ার আওয়ার) অথবা Ah(অ্যাম্পিয়ার আওয়ার) লেখা থাকে যা দ্বারা ব্যাটারির ক্ষমতা বুঝা যায় আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী এটা বিভিন্ন হতে পারে। তবে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ব্যাকআপ হলে ভাল হয়।

১০। কিবোর্ড এবং টাচ্প্যাডঃ আপনি কি ধরণের কি বোর্ডের সাথে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন অবশ্যই সে কি বোর্ড সম্বলিত ল্যাপটপটি কিনতে হবে। এছাড়া টাচ প্যাড মসৃণভাবে কাজ করে কিনা কেনার সময় অবশ্যই দেখে নেওয়া উচিত।

বর্তমান কিছু ল্যাপটপে কিবোর্ড এ ব্যাকলিট সংযুক্ত আছে। ব্যাকলিট থাকলে অন্ধকারেও ল্যাপটপের কি বোর্ড দেখা যায়। মাঝারি দামের ল্যাপটপের কিবোর্ডেও আজকাল লাইট থাকে।



১১। ব্লটুথ ও ওয়্যারলেস কানেকশনঃ  ওয়াই ফাই অ্যাডাপ্টরের ক্ষমতা দেখে ল্যাপটপ কিনতে হবে যাতে নির্বিঘ্নে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যাবহার করা যায়। ডুয়াল ব্যান্ডের যেসকল ওয়্যারলেস অ্যাডাপ্টর পাওয়া যায় সেগুলো ভাল মানের হয়ে থাকে। ব্লটুথ এর ক্ষেত্রে এখন বাজারে ৫.o পাওয়া যাচ্ছে।
১২. HDMI এবং USB ৩.২ঃ  আপনার ল্যাপটপ যদি অফিসের কাজের জন্য কিনে থাকেন তাইলে VGA এবং HDMI আই এই দুটি পোর্ট যেন থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। এবং ইউ এসবি ৩.২ পোর্ট দিয়ে ইউএসবি ২ এর তুলনায় দ্রুত গতিতে ডাটা ট্রান্সফার করা যায়। এজন্য ল্যাপটপের পোর্টগুলো ইউ এসবি ৩.২ কিনা তা দেখে নেওয়া উচিত।




No comments

Powered by Blogger.